
পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত দেগঙ্গা, এলাকায় বোমাবাজি ও ১১ টি তাজা বোমা উদ্ধার।
সঞ্জয় সাহা
পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনকে কেন্দ্র করে আবারো উত্তপ্ত হয়ে উঠল উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গা। এলাকায় একাধিক বোমাবাজির অভিযোগ। পাশাপাশি একটি ব্যাগ থেকে ১১ টি তাজা বোমা উদ্ধার করেছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ। পঞ্চায়েত নির্বাচনে এবারে দেগঙ্গা থেকে বিরোধী শূন্য করে দেগঙ্গার ১৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েত এবং পঞ্চায়েত সমিতি দখল নিয়েছে তৃণমূল কংগ্রেস।
সোমবার উত্তর ২৪ পরগনার দেগঙ্গার বিডিও অফিসে পঞ্চায়েত সমিতি বোর্ড গঠনের কর্মসূচি ছিল। সকাল থেকে এলাকায় বিশাল পুলিশি টহল ছিল। পাশাপাশি কোনো রকম অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেই উদ্দেশ্যে বিডিও অফিস চত্বর থেকে ২০০ মিটার ১৪৪ ধারা জারি ছিল। তা সত্ত্বেও বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতীদের বোমাবাজির ঘটনায় উত্তপ্ত হয়ে ওঠে দেগঙ্গা বিডিও অফিস চত্বর । বেলা ১২ টা থেকে পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়।দেগঙ্গা ব্লকের সমস্ত পঞ্চায়েত সমিতির সদস্যদের কে নিয়ে মফিদুল হক সাহাজি (মিন্টু) ও দেগঙ্গার যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আনিসুর রহমান পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন। গোটা এলাকা ছিল শান্তিপূর্ণ। এদিন বেলা একটা নাগাদ দেগঙ্গার বিডিও অফিসের পাশে বিনাপানি বালিকা বিদ্যালয় মাঠে বহিরাগত কিছু দুষ্কৃতী এসে কয়েকটি বোমাবাজি করে এলাকায় উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে। সাথে সাথে ঘটনাস্থলে পৌঁছায় দেগঙ্গা থানার বিশাল পুলিশবাহিনী ও বারাসাতের এসডিপিও দুর্বার ব্যানার্জি। ঘটনাস্থলে তল্লাশি চালিয়ে বিনাপানি বালিকা বিদ্যালয় এর পাশে একটি বটগাছের নিচে একটি প্যাকেটের মধ্য থেকে পুলিশ ১১ টি তাজা বোমা উদ্ধার করে।
ঘটনায় তীব্র চাঞ্চল্য ছড়ায় এলাকায়। গোষ্ঠী দ্বন্দ্বের জেরে এই ঘটনা বলে জানা যায়। দেগঙ্গা তে তৃণমূলের দুটি গোষ্ঠী রয়ে। একটি বিধায়ক রহিমা মন্ডলের গোষ্ঠী অপরটি ব্লক সভাপতি মফিদুল হক হক সাহাজির গোষ্ঠী। এই বোমাবাজির ঘটনায় তৃণমূলের কর্মী সমর্থকরা একে অপরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলে। তবে কে বা কারা বোমাবাজি করে এলাকা উত্তপ্ত করার চেষ্টা করেছে বিষয়টি এখনও পর্যন্ত পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়। ঘটনার তদন্তে নেমেছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ।
পাশাপাশি এদিন এই ঘটনার পরেও অবশেষে শান্তি শৃঙ্খলার মাধ্যমে দেগঙ্গা পঞ্চায়েত সমিতির বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন দেগঙ্গার প্রাক্তন ব্লক সভাপতি মফিদুল হক সাহাজি ও সহ-সভাপতি হিসেবে নির্বাচিত হন তুষার দাস। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে এদিনের এই নির্বাচনী বোর্ড গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়। এই বোর্ড গঠন প্রক্রিয়াতে উপস্থিত ছিলেন রাজ্য মাদ্রাসার শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও দেগঙ্গার ৩৬ নম্বর কেন্দ্রের জেলা পরিষদের নবনির্বাচিত প্রার্থী এ কে এম ফরহাদ, জেলা পরিষদের নির্বাচিত প্রার্থী উষা দাস, দেগঙ্গা চাপাতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান হুমায়ুন রেজা চৌধুরী, হাদিপুর ঝিকরা ২ নম্বর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শাহাবুদ্দিন মন্ডল সহ তৃণমূল এর বিশিষ্ট নেতা নেতৃত্বরা। মফিদুল হক সাহাজি এদিন বলেন, শান্তিপূর্ণভাবে দেগঙ্গার পঞ্চায়েত নির্বাচনের বোর্ড গঠনের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলো। আগামী দিনে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দেগঙ্গা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাব। এই জয় মা মাটি মানুষের জয়, দেগঙ্গার মানুষের জয়।গোটা দেগঙ্গা থেকে বিরোধীশূন্য করতে পেরে দেগঙ্গার সাধারণ মানুষও তৃণমূল কর্মীদেরকে তিনি সাধুবাদ জানান।পরিশেষে দেগঙ্গার যুব তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আনিসুর রহমান বলেন, দেগঙ্গা নির্বাচনী প্রক্রিয়া শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে। আমাদের তৃণমূল কংগ্রেসকে বদনাম করার জন্য কিছু বহিরাগত দুষ্কৃতীরা এসে এলাকায় বিক্ষিপ্তভাবে বোমাবাজি করে উত্তপ্ত করার চেষ্টা করে।সে বিষয়টি নিয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে সঠিক তদন্ত করে দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়ার জন্য। পাশাপাশি দেগঙ্গার মানুষ শান্তিপ্রিয় তারা জাত পাতের ভেদাভেদ বোঝেনা হাতে হাত রেখে ভাতৃত্বের বন্ধন ঐক্যবদ্ধ হয়ে আগামী দিনে দেগঙ্গা উন্নয়নমূলক কাজ করে যাব।